সোমবার ১৪ এপ্রিল ২০২৫ - ১৯:১৮
আল-আকসা মসজিদে অবৈধ ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা

দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব পাসওভারের দ্বিতীয় দিনে (সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫) ব্যাপক সংখ্যক ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী হামলা চালায়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ইসরাইলি পুলিশের নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে ৭৬৫ জন অবৈধ বসতি স্থাপনকারী আল-মুগাররাবা গেট দিয়ে মসজিদের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। তারা দলবদ্ধভাবে মসজিদের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়। 

এ ঘটনার মাত্র একদিন আগে, রোববার (পাসওভারের প্রথম দিনে) প্রায় ৫০০ জন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী একইভাবে আল-আকসায় অনুপ্রবেশ করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। ইসলামিক ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে ইসরাইলের “আল-আকসাকে ইহুদিকরণ করার পরিকল্পনার অংশ” বলে উল্লেখ করেছে। 

পাসওভার উৎসব ও আল-আকসায় অনুপ্রবেশের ইতিহাস
পাসওভার ইহুদি ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যা হজরত মূসা (আ.)-এর নেতৃত্বে ইসরাইলিদের মিসর থেকে মুক্তির স্মরণে পালিত হয়। তবে গত কয়েক দশক ধরে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা আল-আকসা মসজিদে ব্যাপক অনুপ্রবেশ ও হামলা চালিয়ে আসছে। 

ফিলিস্তিনি ওয়াকফ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ১৩,০৬৪ জন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী আল-আকসায় প্রবেশ করেছে। এছাড়া, গত রমজান মাসে (মার্চ-এপ্রিল ২০২৫) মসজিদে ২১ বার অবৈধ অনুপ্রবেশ ও হামলা চালানো হয়। 

আন্তর্জাতিক আইন ও ইসরাইলি দখলদারিত্ব
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং ১৯৮০ সালে একতরফাভাবে সমগ্র জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী ঘোষণা করে, যা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি। আল-আকসা মসজিদ ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হওয়ায় ফিলিস্তিনি ও মুসলিম বিশ্বের জন্য এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অন্যদিকে, ইহুদি জাতীয়তাবাদীরা একে "টেম্পল মাউন্ট" বলে দাবি করে আসছে, যা বিতর্ক ও সংঘাতের মূল কারণ। 

ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব এই হামলাকে “ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড” আখ্যা দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। অন্যদিকে, আরব লীগ ও ওআইসি ইসরাইলের এই কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে। 

উত্তেজনা বৃদ্ধির শঙ্কা
গাজায় চলমান যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলার মধ্যেই আল-আকসায় এই ঘটনা নতুন করে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই হামলা পুরো অঞ্চলে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে পারে। 

সর্বশেষ অবস্থা
ইসলামিক ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ আল-আকসা মসজিদ রক্ষায় আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে, ইসরাইলি পুলিশ মসজিদে প্রবেশকারী বসতি স্থাপনকারীদের নিরাপত্তা দিতে মোতায়েন থাকায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়ছে। 

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জরুরি হস্তক্ষেপ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha